নবজাতকদের জেনেটিক রোগ শনাক্তে নতুন রক্ত পরীক্ষার উদ্ভাবন

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : বিরল জেনেটিক রোগ আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্তে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন রক্তভিত্তিক পরীক্ষা (ব্লাড টেস্ট) তৈরি করেছেন। গবেষকদের দাবি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে আগের তুলনায় অনেক দ্রুত—মাত্র তিন দিনেই—রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এটার ফলে চিকিৎসা শুরু করার পথকে সহজ করে তুলবে।

 

সাধারণত, সিস্টিক ফাইব্রোসিস থেকে শুরু করে মাইটোকন্ড্রিয়া-সম্পর্কিত (শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র) নানা বিরল জেনেটিক রোগ শনাক্তে জিন পরীক্ষার (জেনোমিক টেস্টিং) ওপর নির্ভর করা হয়। কিন্তু এসব পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ডেভিড স্ট্রাউড জানান, অনেক সময় জেনেটিক পরীক্ষায় রোগ নির্ণয় না হলে রোগীকে বছরের পর বছর নানা পরীক্ষা করাতে হয়, যাকে আমরা বলি ‘ডায়াগনস্টিক ওডিসি’—এক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এমনকি কিছু পরীক্ষায় শিশুদের শরীর থেকে পেশির নমুনা নিতে হয়, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

 

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষকরা রোগীর রক্ত থেকে বিশেষ ধরণের কোষ নিয়ে তাতে থাকা হাজারো প্রোটিন বিশ্লেষণ করেছেন এবং তা সুস্থ মানুষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ, প্রতিটি জিনই প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা বহন করে। ফলে, কোন জিনের পরিবর্তনে ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি হচ্ছে আর কোনটা নিরীহ, তা চিহ্নিত করা সহজ হয়।

 

এই পদ্ধতিকে বলে প্রোটিওমিক বিশ্লেষণ (Proteomics)। এটি একবারেই বহু জিনগত পরিবর্তনের প্রভাব একত্রে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং এতে ফল মিলতে সময় লাগে মাত্র কয়েক দিন।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিটি প্রচলিত টেস্টগুলোর চেয়েও ভালোভাবে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ শনাক্ত করতে পারে। এমন রোগগুলোর ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর যেখানে জিনগত পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে।

 

অন্য গবেষক অধ্যাপক ডেভিড থরবার্ন জানান, জেনেটিক টেস্টে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। আমরা মনে করি, প্রোটিওমিক টেস্ট যোগ করলে তা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এই পরীক্ষায় মাত্র ১ মিলিলিটার রক্ত নিলেই চলে। যেখানে আগে বায়োপসি প্রয়োজন হতো, এখন সেখানে সামান্য রক্তেই হবে কাজ। এতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম এবং একাধিক রোগ শনাক্তের সুযোগ থাকায় বাড়তি পরীক্ষারও দরকার হয় না।

 

গবেষণায় অংশ না নিলেও, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল জেনেটিকসের অধ্যাপক মিশাল মিনচুক বলেন, এই গবেষণা বিরল রোগ শনাক্তে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে রোগী ও চিকিৎসা ব্যবস্থার দু’পক্ষেরই উপকার হবে।

 

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) নিউরোলজির অধ্যাপক রবার্ট পিটসিথলি বলেন, এখন প্রয়োজন আরও বিস্তৃত পরীক্ষা এবং যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় (NHS) এই প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা। এই নতুন পদ্ধতি শুধুমাত্র রোগ শনাক্তেই সহায়ক নয়, বরং ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও অভিভাবকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে পারে। কারণ এটি প্রি-ন্যাটাল জেনেটিক টেস্টের সুযোগও সৃষ্টি করে। সূত্র : গার্ডিয়ান

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ৮১১ জন আসামি গ্রেফতার

» নির্বাচনী বাজেটে কোনো কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

» ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ চালু করল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

» জুলাই শহীদদের স্মরণে গণসংহতির শ্রদ্ধা, সরকারকে সতর্ক করলেন সাকি

» ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

» ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, প্রতিবছর অভ্যুত্থান স্মরণের অঙ্গীকার

» জুলাই গণহত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির পক্ষে শুনানি সোমবার

» ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া

» জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো: নাহিদ ইসলাম

» আসিফ মাহমুদের অস্ত্র রাখার বিষয়টি আইনত অপরাধ, বিচার করা উচিত : নিলুফার মনি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নবজাতকদের জেনেটিক রোগ শনাক্তে নতুন রক্ত পরীক্ষার উদ্ভাবন

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : বিরল জেনেটিক রোগ আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্তে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন রক্তভিত্তিক পরীক্ষা (ব্লাড টেস্ট) তৈরি করেছেন। গবেষকদের দাবি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে আগের তুলনায় অনেক দ্রুত—মাত্র তিন দিনেই—রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এটার ফলে চিকিৎসা শুরু করার পথকে সহজ করে তুলবে।

 

সাধারণত, সিস্টিক ফাইব্রোসিস থেকে শুরু করে মাইটোকন্ড্রিয়া-সম্পর্কিত (শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র) নানা বিরল জেনেটিক রোগ শনাক্তে জিন পরীক্ষার (জেনোমিক টেস্টিং) ওপর নির্ভর করা হয়। কিন্তু এসব পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ডেভিড স্ট্রাউড জানান, অনেক সময় জেনেটিক পরীক্ষায় রোগ নির্ণয় না হলে রোগীকে বছরের পর বছর নানা পরীক্ষা করাতে হয়, যাকে আমরা বলি ‘ডায়াগনস্টিক ওডিসি’—এক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এমনকি কিছু পরীক্ষায় শিশুদের শরীর থেকে পেশির নমুনা নিতে হয়, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

 

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষকরা রোগীর রক্ত থেকে বিশেষ ধরণের কোষ নিয়ে তাতে থাকা হাজারো প্রোটিন বিশ্লেষণ করেছেন এবং তা সুস্থ মানুষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ, প্রতিটি জিনই প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা বহন করে। ফলে, কোন জিনের পরিবর্তনে ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি হচ্ছে আর কোনটা নিরীহ, তা চিহ্নিত করা সহজ হয়।

 

এই পদ্ধতিকে বলে প্রোটিওমিক বিশ্লেষণ (Proteomics)। এটি একবারেই বহু জিনগত পরিবর্তনের প্রভাব একত্রে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং এতে ফল মিলতে সময় লাগে মাত্র কয়েক দিন।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিটি প্রচলিত টেস্টগুলোর চেয়েও ভালোভাবে মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ শনাক্ত করতে পারে। এমন রোগগুলোর ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর যেখানে জিনগত পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে।

 

অন্য গবেষক অধ্যাপক ডেভিড থরবার্ন জানান, জেনেটিক টেস্টে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। আমরা মনে করি, প্রোটিওমিক টেস্ট যোগ করলে তা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এই পরীক্ষায় মাত্র ১ মিলিলিটার রক্ত নিলেই চলে। যেখানে আগে বায়োপসি প্রয়োজন হতো, এখন সেখানে সামান্য রক্তেই হবে কাজ। এতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম এবং একাধিক রোগ শনাক্তের সুযোগ থাকায় বাড়তি পরীক্ষারও দরকার হয় না।

 

গবেষণায় অংশ না নিলেও, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল জেনেটিকসের অধ্যাপক মিশাল মিনচুক বলেন, এই গবেষণা বিরল রোগ শনাক্তে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে রোগী ও চিকিৎসা ব্যবস্থার দু’পক্ষেরই উপকার হবে।

 

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) নিউরোলজির অধ্যাপক রবার্ট পিটসিথলি বলেন, এখন প্রয়োজন আরও বিস্তৃত পরীক্ষা এবং যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় (NHS) এই প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা। এই নতুন পদ্ধতি শুধুমাত্র রোগ শনাক্তেই সহায়ক নয়, বরং ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও অভিভাবকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে পারে। কারণ এটি প্রি-ন্যাটাল জেনেটিক টেস্টের সুযোগও সৃষ্টি করে। সূত্র : গার্ডিয়ান

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com